পাহাড়ে থেমে নেই খুন-খারাবী

২৭৮

॥ হিল নিউজ রিপোর্ট ॥

মহামারী করোনার মাঝেও পার্বত্য চট্টগ্রামে থেমে নেই খুন-খারাবীর। চলমান রয়েছে পাহাড়ি সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর অপকর্ম। পাহাড়ে প্রতিনিয়ত চলছে খুন, অপহরণ, সন্ত্রাসী হামলা ও চাঁদাবাজি। করোনাকালেও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড বন্ধ না হওয়ায় উদ্বেগ বেড়েছে পার্বত্যবাসীর। চলতি জুন মাসেও (২০২১) সন্ত্রাসীরা খুন করেছে তিন জনকে। এর মধ্যে একজন বান্দরবানের রোয়ংছড়ি উপজেলায়। অপর দুইজন রাঙামাটির জুরাছড়ি ও খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলায়।
করোনার শুরু থেকে সন্ত্রাসীদের ধারাবাহিক খুনের সর্বশেষ শিকার খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার অমর জীবন চাকমা। তিনি পাহাড়ীদের সংগঠন ইউপিডিএফ (প্রসিত গ্রুপ) এর সাবেক কর্মী বলে জানায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। দল ত্যাগ করায় ইউপিডিএফ তাকে হত্যা করে বলে অভিযোগ। এর এক সপ্তাহ আগে বান্দরবানের রোয়াংছড়িতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে খুন হন নওমুসলিম ওমর ফারুক ত্রিপুরা। তারও পাঁচ দিন আগে (১৩জুন ২০২১) রাঙামাটির জুরাছড়ি উপজেলায় পাথর মনি নামের এক কার্বারীকে (গ্রাম প্রধান) খুন করে সন্ত্রাসীরা।
সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায় ২০২০ সালের মার্চ মাসে বাংলাদেশে করোনার সংক্রমন শুরু হলে পার্বত্য চট্টগ্রামেও তার প্রভার বিস্তার ঘটে। করোনার শুরু থেকেই পাহাড়ের মানুষ এ অদৃশ্য শত্রুর সাথে লড়াই শুরু করে। রাজনৈতিক দল, প্রশাসন, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীসহ সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষ ব্যস্ত ছিলো করোনা প্রতিরোধ বা মোকাবেলায়। কিন্তু মানবিক সংকটের এমন সময়েও এতটুকু থেমে ছিলো না পাহাড়ি সংগঠনগুলোর অমানবিক কার্যক্রম। করোনা জুরেই খুন-খারাবীতে মত্ত ছিলো এসব সংগঠনের অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা। কোন কোন সময় এসব সংগঠনের অপতৎপরতা করোনার চেয়ে ভয়াবহ হয়ে উঠে। একদিকে করোনার থাবায় কর্মহীন অপরদিকে সন্ত্রাসীদের ভয়। এক দূর্বিসহ অসহায় অবস্থা পাহাড়ের সাধারণ মানুষের। গেল বছর করেনোর মাঝে খাগড়াছড়িতে এক পল্লি চিকিৎসককে ডেকে নিয়ে খুন করে সন্ত্রাসীরা। একই জেলায় ঘুমন্ত গ্রামবাসীর উপর ব্রাশ ফায়ার করে সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনায় ফাতেমা নামের এক গৃহবধু নিহত হন। এ ছাড়াও খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলায় চাষিদের উপর দফায় দফায় হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা।
এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে পার্বত্য চট্টগ্রামের সন্ত্রাসী পরিস্থিতি নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ জানিয়েছেন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ। আঞ্চলিক সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি কাজি মুজিবুর রহমান বলেন, পাহাড়ি সংগঠনগুলোকে আর ছাড় দেয়ার সময় নেই। তিনি এসব ঘটনার মূল হোতা হিসেবে জেএসএস প্রধান সন্তু লারমাকে দায়ি করে বলেন “সন্তু লারমা পার্বত্য চুক্তি লঙ্ঘন করেছেন, তাই তার সাথে আর কোন সমঝোতা হতে পারে না, তাকে আইনের আওতায় আনতে হবে”। পাহাড়ের অরক্ষিত সীমান্ত এলাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রনে এনে সেনা ক্যাম্প বৃদ্ধির দাবি জানান তিনি।
সাবেক সংসদ সদস্য ফিরোজা বেগম চিনু বলেন, পার্বত্যবাসীকে শান্তি দিতে হলে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের কোন বিকল্প নেই।
রাঙামাটি পুলিশ সুপার মীর মোদদাছছের হোসেন এ প্রসঙ্গে বলেন, পাহাড়ি সংগঠনগুলোকে আলোচনার টেবিলে বসিয়ে চলমান সমস্যার সমাধন করতে হবে। এ ছাড়াও সাধারণ মানুষকে সন্ত্রাসীদের বয়কট করে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহবান জানান তিনি।

Facebook Comments Box
You might also like