ইকোট্যুরিজমের অপার সম্ভাবনাময় লংগদু
॥ মাহমুদুল হাসান সোহাগ ॥
রাঙ্গামাটি জেলার গুরুত্বপূর্ণ একটি উপজেলা লংগদু। পর্যটন শিল্প বিকাশে এ উপজেলাকে সম্ভাবনাময় হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশেষ করে হ্রদ আর পাহাড় ঘেরা এ উপজেলায় ইকো ট্যুরিজমের সম্ভাবনা বেশি। ইকোট্যুরিজমের মাধ্যমে জীববৈচিত্রে সংরক্ষণের পাশাপাশি তৈরি হবে কর্মসংস্থানের সুযোগ।
এ উপজেলায় স্থানীয় পর্যায়ে নেয়া হয়েছে ছোট ছোট পর্যটন উদ্যোগ। লংগদু উপজেলার পর্যটন স্পটগুলোর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি তুলে ধরা হলোঃ
বনশ্রী রেস্ট হাউস : লংগদু উপজেলার প্রাচীন পর্যটন কেন্দ্র বনশ্রী রেস্ট হাউস। মাইনিমূখে অবস্থিত এ রেস্ট হাউসটি গাছপালায় পরিপূর্ণ। প্রচন্ড গরমেও স্বস্তি অনুভব করা যায় এখানে। ভরা মৌসুমে এখান থেকে কাপ্তাই লেকের জলারাশি, জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য অবলোকন করা যায়। সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের লাগানো বকুল গাছটি এখন বৃহৎ আকার ধারণ করেছে।
রাবেতা এগ্রো প্রজেক্ট : লংগদু উপজেলার মাইনিমূখ ইউনিয়নে রাবেতা এগ্রো প্রজেক্ট অবস্থিত। বিশাল এলাকা নিয়ে ফলজ বাগান এটি। ছায়াঘেরা পরিবেশের মাঝে রয়েছে স্কুল, কলেজ ও হাসপাতাল। গাছের চারা ও ফুল কেনার জন্য রয়েছে নার্সারি। থাকার জন্য রয়েছে বনানী ঘেরা রেস্ট হাউস।
বৈচিত্র বিলাস : লংগদু সেনা জোন কর্তৃক পরিচালিত বৈচিত্র বিলাস পার্কটি। এ উপজেলায় বিনোদনের উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত পার্কের ভেতরে রয়েছে সুন্দর বসার স্থান, ছোটদের খেলনা, মিনি চিড়িয়াখানা, নৌকা চড়ার ব্যবস্থাসহ বিনোদনের নানা কিছু। প্রতিদিনই বিনোদন প্রেমিদের উপস্থিতিতে মুখর থাকে এ পার্কটি। এছাড়া রয়েছে খাবারের জন্য ক্যাফে। গাছের উপর ঘরে বসে প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগের পাশাপাশি খাবারও উপভোগের সুযোগ।
বায়তুশ শরফ কমপ্লেক্স : ইসলাম ধর্মীয় শিক্ষা প্রদান ও প্রচারের গুরুত্বপূর্ণ স্থান বায়তুশ শরফ কমপ্লেক্স। লংগদু উপজেলার গাঁথাছড়ায় অবস্থিত এ কমপ্লেক্স। এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও স্থাপনা সমুহ যেকোনো দর্শনার্থীকে বিমোহিত করবে। লংগদু উপজেলায় বেড়াতে আসলে এ কমপ্লেক্স এলাকাটি একটি আকর্ষনীয় স্থান।
তিনটিলা বন বিহার : বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারীদের কাছে তিনটিলা বন বিহার একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। লংগদু উপজেলা সদরের সন্নিকটে এটি অবস্থিত। এই স্থানের প্রাকৃতিক পরিবেশ ও স্থাপনা সমুহ মনে ভালো লাগা এনে দেবে। তিনটিলা বন বিহার চমৎকার একটি দর্শনীয় স্থান।
গাঁথাছড়া-মাইনিমুখ সেতু ঃ বিকেল বেলা অবসর কাটানোর আদর্শ স্থান হয়ে উঠেছে এ সেতুটি। কাচালং নদীর শীতল হাওয়া, প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগের আর্কষনীয় স্থান এ সেতু। রাতের বেলা সোলার লাইট গুলো সৌন্দর্যের নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এ সেতুটি হতে পারে বিকেল বেলা অবসর কাটানোর উত্তম স্থান।
কাট্টলি বিল : কাপ্তাই লেকের জলরাশির বিশাল একটি অংশ জুড়ে রয়েছে কাট্টলি বিল। লংগদু উপজেলায় এ বিলের অধিকাংশ জুড়ে অবস্থান। এ বিলকে বলা হয় মৎস্য সম্পদের ভান্ডার। শীতের মৌসুমে থাকে অতিথি পাখির আনাগোনা। প্রকৃতি প্রেমিদের এ বিল হতে পারে আনন্দের অনাবিল উৎস।
ওয়াচ টাওয়ার : লংগদু উপজেলা পরিষদের অর্থায়নে কাট্টলি বাজারের সন্নিকটে মাইজ্জার কিলায় ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। টাওয়ারের ছাদে সোলার লাইট স্থাপন করা হবে। পর্যায়ক্রমে পর্যটনের সকল আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংযুক্ত করা হবে বলেও জানা গেছে। এ ওয়াচ টাওয়ারটি নির্মিত হলে এখান থেকে উপভোগ করা যাবে কাপ্তাই লেকের বিশাল জলরাশি, মাছ ধরার দৃশ্য এবং পাওয়া যাবে প্রকৃতির নিখাদ সান্নিধ্য।
এছাড়া এ উপজেলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অসংখ্য দর্শনীয় স্থান। ইকো ট্যুরিজমের রয়েছে অপার সম্ভাবনা। বেসরকারিভাবে এ উপজেলায় পর্যটনের উদ্যোগ নেই বললেই চলে।
এ ক্ষত্রে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও উদ্দ্যোক্তাদের এগিয়ে আসা প্রয়োজন। দরকার পর্যটকদের জন্য আরো সুযোগ-সুবিধা তৈরি করা। এছাড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার বিষয়টি গুরুত্বেও সাথে বিবেচনা করতে হবে। দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে পারলে এ খাতে তৈরি হতে পারে কর্মসংস্থানের ব্যপক সুযোগ।