সাজেকে বেড়েছে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ, রেড জোন ঘোষণা

১৮০

আবু নাছের, বাঘাইছড়ি (রাঙামাটি) :

মহামারী করোনা ভাইরাসের প্রদূর্ভাবের মাঝেই রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সীমান্তবর্তী সাজেক ইউনিয়ন এ হঠাৎ করে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ বেড়েছে। বিশেষ করে দুর্গম সাজেক ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের ত্রিপুরা পাড়া, বড়ইতলী পাড়া, শিব পাড়া, দেবাছড়া, নরেন্দ্র পাড়া, ১নংওয়ার্ডের মন্দির ছড়া, শিয়ালদহ, তুইচুই,বেটলিং এই সব এলাকায় ম্যালেরিয়া প্রকোপ বেশি দেখা দিয়েছে।

বাঘাইছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ ইফেতেকার আহমদ জানান, গত বছরের তুলনায় এই বছরে ম্যালেরিয়া রুগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। সাজেক ইউনিয়নে প্রকোপ বেশি হওয়ায় এ ইউনিয়নকে ম্যালেরিয়ার রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে ।

সাজেকের ৭নং ওয়ার্ডের ত্রিপুরা পাড়ার বাসিন্দা পুস্প ত্রিপুরা জানান তার পরিবারের একই  শুল্ক মহন ত্রিপুরা, মনিকা ত্রিপুরা সহ তিনি নিজেই ম্যালেরিয়া আক্রান্ত হয়েছেন।

পার্বত্য চট্টগ্রামে ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রনে সরকারের সহযোগি হিসেবে কর্মরত সেরকারী সংস্থা ব্রাকের হিসাব মতে এই বছর ২০২১ সালের জুন মাস পর্যন্ত দশ হাজার রোগির রক্ত পরিক্ষা করে ৬৭জন ম্যালেরিয়া রোগী শনাক্ত হয়েছে এর মধ্যে জুন মাসেই ম্যালেরিয়া পজিটিভ আসে ৪৯ জনের। এছাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের হিসেবে সেখানে জুন মাসে ম্যালেরিয়া রুগীর সংখ্যা ছিলো ২৯জন।

ব্রাকের হিসাব মতে গত ২০১৯সালের ২৮হাজার রুগীর রক্ত পরিক্ষা করে ১৩০৬জনের পজিটিভ আসে এবং গত বছর ২০২০সালে ২৮৬৬৭ জন রুগীর রক্ত পরিক্ষা করে ২৮৯জনই ম্যালেরিয়া আক্রান্ত হয়েছে।

সাজেক ইউপি চেয়ারম্যান নেনসন চাকমা জানান, সরকারি এবং বেসরকারী হিসাবের চেয়ে ম্যালেরিয়া রোগীর সংখ্যা বেশি হবে। কারণ দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় ম্যালেরিয়া রোগীরা রক্ত পরীক্ষা করতে আসে না। জ্বরের লক্ষণ দেখে স্বজনেরা বাজারে এসে ফার্মেসি থেকে ঔষধ নিয়ে যায়। তিনি আরো জানান গ্রামবাসী মশারি ব্যাবহার না করার কারনে ম্যালেরিয়ার প্রকপ বেড়ে গেছে। ইউনিয়ন এর সদস্যদের জরুরি সভা করে জনসচেতনতা বাড়ানোর পরামর্শ সহ নিজে কাজ করে যাচ্ছেন এ জনপ্রতিনিধি।

সাজেক ইউনিয়ন পরিষদের ৭নং ওয়ার্ডের সদস্য হীরা নন্দ্র ত্রিপুরা জানান, এর আগে সাজেকে মহামারী আকারে ডায়রিয়া এবং হাম (পোলিও) দেখা দিয়েছিল। তবে সেনাবাহিনীর সদস্যদের সহায়তায় হ্যালিকপ্টারে করে নিয়ে গিয়ে অনেক মুমূর্ষু রোগীকে চিকিৎসা দিয়ে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচিয়েছিলেন তারা।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ ইফেতেকার আহমদ জানান, গত বছর কড়াকড়ি লগডাউন থাকার কারনে কেউ জুম বা বাশ, গাছ কাটতে জঙ্গলে না যাওয়ায় ম্যালেরিয়া রুগীর সংখ্যা কম ছিলো। তবে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় সরকার ইতিমধ্যে রাঙামাটি খাগড়াছড়ি বান্দরবান কক্সবাজারের রামু সহ ম্যালেরিয়া প্রবণ জেলাগুলোতে ‘মাইক্রো প্ল্যান’ কার্যক্রম হাতে নিয়েছে ২০২৫সালের মধ্যে সরাকারের ম্যালেরিয়া রুগীর সংখ্যা শুন্যোর কোঠায় নিয়ে আনার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান স্বাস্থ্য বিভাগের এ কর্মকর্তা ।

সচেতন মহল মনে করেন বাঘাইছড়িতে এ বছর একটানা বৃষ্টিপাত না হওয়ায় মশার প্রজনন বেড়েছে। কারণ একটানা বৃষ্টিপাত না হলে পাহাড়ের বিভিন্ন গর্ত ও ছড়ায় পানি জমে মশার প্রজননে সুবিধা হয়। এ ছাড়া ভারতের মিজোরাম রাজ্যে ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে সেখান থেকেও ম্যালেরিয়া ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

 

Facebook Comments Box
You might also like