দিঘীনালায় শোহাদায়ে কারবালা ও বঙ্গবন্ধুর স্মরণে মুনিরীয়া তবলীগের ঈছালে ছাওয়াব মাহফিল

৩৮৩

সালাউদ্দিন শাহিন, বাঘাইছড়ি 

কারবালার ময়দানে আহলে বায়তে রাসূলগনের শাহাদাতের বিনিময়ে প্রকৃত ঈমানদার ও বেঈমানদের মধ্যে পার্থক্য দিবালোকের ন্যায় পরিস্কার হয়ে গিয়েছিল। হযরত ঈমাম হোসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু সহ কারবালার সকল শহীদগণ ঈমানের প্রশ্নে কোন আপস করেননি। আবার স্বাধীন বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু একে অন্যের পরিপূরক; বঙ্গবন্ধু এদেশের নিপীড়িত-নির্যাতিত মানুষের অন্তরে স্বাধীনতার বীজ বপন করেছিলেন। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধুর হাতে প্রতিষ্ঠিত ইসলামিক ফাউণ্ডেশন সহ বিভিন্ন দ্বীনি প্রতিষ্ঠান এর মাধ্যমে এখনও এদেশে ইসলামের দাওয়াত প্রচারিত হচ্ছে। কিন্তু পচাত্তরের ১৫ আগষ্ট দেশদ্রোহীরা বঙ্গবন্ধুকে পরিবারসহ হত্যা করে দেশের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করে।

৬৮০ ঈসায়ী সনে ইরাকের কারবালার প্রান্তরে আহলে বায়তে রাসূল সহ সকল শোহাদায়ে কারবালা এবং স্বাধীন বাংলাদেশের স্হপতি বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব সহ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্টের সকল শহীদদের স্মরণে অরাজনৈতিক তরিক্বতভিত্তিক আধ্যাত্মিক সংগঠন মুনিরীয়া যুব তবলীগ কমিটি বাংলাদেশ দিঘীনালা থানা (খাগড়াছড়ি) ও সাজেক থানা (রাঙ্গামাটি) এর যৌথ সমন্বিত সাংগঠনিক টিমের উদ্যোগে দিঘীনালা থানা বাজারে বৃহস্পতিবার বাদে আসর আয়োজিত “ঈছালে ছাওয়াব মাহফিল” অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন মুনিরীয়া যুব তবলীগ কমিটি বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ওলামা পরিষদের সদস্য ও দিঘীনালা-সাজেক সাংগঠনিক টিমের সমন্বয়ক মাওলানা মুহাম্মদ বশির উদ্দিন আনসারী ছাহেব।

দিঘীনালাস্হ পাবলাখালী বাঙ্গালী পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জনাব মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম এর সভাপতিত্বে প্রধান আলোচক ছিলেন বাঘাইছড়ি সিভিল ইন্জিনিয়ার্স ফোরামের সিনিয়র সহ-সভাপতি ইন্জিনিয়ার মুহাম্মদ আয়াতুল্লাহ রুহুল খোমেনী (শামীম)।

সভাপতির বক্তব্যে দিঘীনালাস্হ পাবলাখালী বাঙ্গালী পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জনাব মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম বলেন, “শোহাদায়ে কারবালার অন্যতম প্রধান শহীদ আহলে বায়তে রাসূল হযরত ঈমাম হোসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর ঈমানী চেতনা ক্বলবে ধারণ করে প্রকৃত আশেকে রাসূল তথা ইনসানে কামেল হিসেবে গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে কাগতিয়া দরবারের আধ্যাত্মিক আমল এর মাধ্যমে যুবসমাজ নৈতিক অবক্ষয় হতে মুক্ত থেকে দক্ষ-দেশপ্রেমিক মানবশক্তিতে পরিণত হচ্ছে; যা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণে-সুন্দর সমাজ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।”

প্রধান আলোচকের বক্তব্যে বাঘাইছড়ি সিভিল ইন্জিনিয়ার্স ফোরামের সিনিয়র সহ-সভাপতি ইন্জিনিয়ার মুহাম্মদ আয়াতুল্লাহ রুহুল খোমেনী (শামীম) বলেন, “সম্প্রতি বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা কাগতিয়া আলীয়া গাউছুল আজম দরবার শরীফ তরিক্বতের বিভিন্ন কার্যক্রম-উদ্যোগ-তাসাউফচর্চা সম্পর্কে বিস্তারিত অবগত হয়ে “তরিক্বত কনফারেন্স ২০২১” ও “এশায়াত সম্মেলন ২০২১” উপলক্ষে পৃথক পৃথক বাণী পাঠিয়ে দরবারের সফলতা কামনা করেন। এজন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্হার কর্মকর্তা জনাব মুহাম্মদ নূর উদ্দিন বলেন, “শরীয়ত ও তরিক্বত একে অপরের পরিপূরক; তাই শরীয়তকে বাদ দিয়ে তরিক্বত পূর্ণাঙ্গ হতে পারে না। তাই কাগতিয়া আলীয়া গাউছুল আজম দরবার শরীফের তরিক্বতে ফরজ-ওয়াজিব কার্যাদি যথাযথভাবে পালনের পাশাপাশি সুন্নাহ-নফল এবাদতঃ নিয়মিত সালাতুল তাহাজ্জুদ, জিকিরে জলী, মোরাকাবা, দৈনিক ১১১১ বার দরুদ শরীফ আদায়, সালাতুল এশরাক, সালাতুল তাওবা, সালাতুল হাজ্বত, সালাতুল শোকর, কোরআন তেলওয়াত, তাহলিল, আয়াতে শেফা, খতমে খাজেগান,দোয়া ইউনুছ ইত্যাদি সর্বোচ্চ গুরুত্বসহকারে প্রতিনিয়ত আদায় করা হয়।

সাজেক থানা ছাত্রলীগ নেতা মুহাম্মদ তারেক হোসেন মুরাদ এর উপস্থাপনায় “ঈছালে ছাওয়াব মাহফিল” এ বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট ব্যাবসায়ী জনাব মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম ইরফাত, সাজেক থানা ছাত্রলীগ মুহাম্মদ মিজানুর রহমান, মুহাম্মদ নাজমুল হাসান, মুহাম্মদ জামশেদ আলী সহ স্হানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।

উল্লেখ্য জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ঈছালে ছাওয়াব, খতমে কোরআন, দোয়া মাহফিল, বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি সহ বিভিন্ন কার্যক্রম সংগঠনের উদ্যোগে সৌদিআরবস্হ পবিত্র মক্কা শরীফ-মদিনা শরীফ, কাতার, কুয়েত, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অষ্ট্রেলিয়া সহ বিভিন্ন দেশে ইতিমধ্যে আয়োজন করা হয়েছে। গত ০৬ আগষ্ট টুঙ্গিপাড়াস্হ বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে খতমে কোরআন এর মাধ্যমে ১৫ দিনের কর্মসূচি গৃহীত হয়; যা ২০ আগষ্ট টুঙ্গিপাড়াতে আখেরী মুনাজাতের মাধ্যমে সমাপ্ত হবে।

মিলাদ-কিয়াম শেষে দেশ জাতির উন্নতি-অগ্রগতি কামনায় শোহাদায়ে কারবালার সকল শহীদগণ ও বাঙ্গালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব সহ ১৫ আগষ্টের সকল শহীদদের রুহের মাগফিরাত ও জান্নাতুল ফেরদাউস কামনায় এবং কাগতিয়া আলীয়া গাউছুল আজম দরবার শরীফের তরিক্বতের রাহবার আওলাদে রাসূল হযরত শায়খ ছৈয়্যদ মোর্শেদে আজম মাদ্দাজিল্লুহুল আলী ছাহেব সহ উপস্হিত সকলের হায়াতে খিজরী ও সুস্হতা কামনা করে বিশেষ মুনাজাত পরিচালনা করেন প্রধান অতিথি মাওলানা মুহাম্মদ বশির উদ্দিন আনসারী ছাহেব।

Facebook Comments Box
You might also like