পাহাড়ের ঘরে ঘরে জ্বর, ফার্মেসীতেই ভরসা

২৮৫

॥ মোহাম্মদ সোলায়মান ॥
পার্বত্য চট্টগ্রামের ঘরে ঘরে জ্বর আর সর্দি কাশি। প্রকোপ বেড়েছে জেলা সদর ছাড়িয়ে প্রত্যন্ত ও দূর্গম জনপদে। কিন্তু এসব মানুষের অধিকাংশই হাসপাতালে আসছে না। ঘরে থেকে নিজের মতো চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাদের ভরসা এলাকার ফার্মেসী (ওষুধের দোকান) বা পল্লী চিকিৎসক। জ্বর ও সর্দি-কাশির মতো করেনা ভাইরাসের লক্ষণ থাকলেও বেশিরভাগ মানুষ হাসপাতাল, স্বাস্থ্য কেন্দ্র বা রেজিষ্ট্রার্ড চিকিৎসকের কাছে আসেছন না। তাদের মাঝে করোনা ভাইরাস পরীক্ষা করার আগ্রহ কম বলে জানান স্থানীয়রা। পরীক্ষার আওতায় না আসায় এসব লক্ষণের রোগিদের সনাক্ত করা যাচ্ছে না তারা করোন ভাইরাস নাকি সাধারণ কোন ভাইরাসে আক্রান্ত। এ অবস্থা চলতে থাকলে পাহাড়ের দূর্গম এলাকায় করোনা ভাইরাসের সংক্রমন নিয়ন্ত্রন সহজ হবে না বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হলে হঠাৎ পার্বত্য তিন জেলায় সংক্রমনের হার বেড়ে যায়। জেলা সদরে পরীক্ষার হার বেশি হওয়ায় প্রতিদিন রেকর্ড ভেঙ্গে সনাক্ত হচ্ছে। কিন্তু প্রত্যন্ত এলাকায় মানুষ পরীক্ষা করতে আগ্রহী না হওয়ায় করোনা ভাইরাস সনাক্ত কম হচ্ছে। কিন্তু এসব এলাকায় এখন ঘরে ঘরে জ্বর, সর্দি কাশি ছড়িয়ে পড়েছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে।
রাঙামাটির লংগদু উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা অরবিন্দু চাকমা জানান, কুরবানির ঈদের পর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জর ও সর্দি কাশির রোগি বেড়েছে। যারা পরীক্ষার আওতায় আসছেন তাদের মধ্যে প্রতিদিন করোন সনাক্তের হার বাড়ছে। আর দূর্গম এলাকার অনেকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে না আসলেও সেখানে জ্বর ও সর্দি কাশির রোগি আগের তুলনায় বেড়েছে। তিনি বলেন কুরবানির ছুটির পর গ্রামে মানুষের আসা যাওয়া বাড়ায় হয়তো আরো দুয়েক সপ্তাহ করোনা সংক্রমনের হার বাড়তে পারে।

ওই এলাকায় কর্মরত একটি ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি মোঃ সেলিম জানান “ঘরে ঘরে জ্বর কাশির রোগি আছে কিন্তু তাদের মধ্যে হাসপাতালে আসার প্রবণতা কম দেখা যাচ্ছে। বেশিরভাগ মানুষ স্থানীয় ওষুধের দোকান থেকে জ্বরের বিভিন্ন ট্যাবলেট কিনে খাচ্ছেন। অনেকে এন্টিবায়েটিক জাতীয় ওষুধ দোকান থেকে কিনে খাচ্ছেন। তিনি জানান সম্প্রতি জ্বর, সর্দি কাশি বাড়ায় প্যারাসিটামল ও এজিথ্রোমাইসিন জাতীয় এন্টিবায়েটিক ওষুধের বিক্রিও বেড়েছে।

খবর নিয়ে জানাগেছে গত দুই সপ্তাহে রাঙামাটি পৌরসভা ও সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় জ্বরে আক্রান্ত বা সর্দি কাশিতে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। শহর এলাকার বেশিরভাগ মানুষ হাসপাতাল ও চিকিৎসকের কাছে যাওয়ায় করোনা ভাইরাসের পরীক্ষার সংখ্যাও বেড়েছে। তাই সনাক্তের হার শহর এলাকায় বেশি। তাপরও শহরের বিভিন্ন এলাকায় বহু মানুষ পরীক্ষা না করে নিজে নিজেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। অনেকে পরীক্ষা না করেও করোনা ধরে নিয়ে চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে।

এদিকে প্রত্যন্ত উপজেলায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক কম থাকায় সেসব এলাকার মানুষ চাইলেও সহজে চিকিৎসার আওতায় আসছে না। বরকল উপজেলার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পল্লী চিকিৎক জানান পাহাড়ের আনাচে কানাচে প্রতিদিন জ্বরের রোগির দেখা পাওয়া যাচ্ছে। তারা প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ কিনে নিয়ে খাচ্ছেন। কারো জ্বর বেশি হলে এন্টিবায়েটিকও খাচ্ছেন। এদের অনেকে জ্বর সেরেও উঠছেন।

রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলায় অবস্থিত কেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পরিচালক আনোয়ার হোসেন জানান, তাদের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়মিত এমবিবিএস চিকিৎসক বসলেও তুলনামূলক রোগি আসছেন না। অথচ বিভিন্ন এলাকায় জ্বর, সর্দি কাশিতে মানুষ আক্রান্ত হয়ে আছে। তিনি বলেন, গত কয়েক সপ্তাহে উপজেলায় জ্বরের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয় ওষুধের দোকানে বিক্রি বেড়েছে। কোন কোন এলাকায় প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধের সংকট দেখা দিয়েছে।
উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন জানান, মানুষের মাঝে সচেতনতা কম থাকায় করোনা ভাইরাসের লক্ষণ থাকলেও মানুষ পরীক্ষা করতে আগ্রহী হচ্ছে না।

Facebook Comments Box
You might also like