হেফাজতে ইসলামের ভবিষ্যৎ কি ?

৪২

ডেস্ক রিপোর্ট : ২০১০ সালের ১৯ জানুয়ারী চট্টগ্রামের শতাধিক কওমি মাদ্রাসার শিক্ষক নিয়ে গঠিত হয় হেফাজতে ইসলাম। নামে একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। হাটহাজারী মাদ্রাসার পরিচালক সদ্য প্রয়াত আল্লামা শাহ আহমদ শফী এবং ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মুফতী ইযহারুল ইসলাম এই সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা।

প্রতিষ্ঠার পর থেকে মৃত্যুর আগের দিন পর্যন্ত সংগঠনটির আমিরের দায়িত্ব পালন করেন শাহ আহমদ শফী। তার অবর্তমানে এই সংগঠনটির অবস্থা কী দাঁড়াবে সে বিষয়ে সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ে নেতৃত্বের সঙ্গে কথা হয়। তারা জানান, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের হক্কানি ওলামায়ে কেরামদের একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। তারা সবাই আহমদ শফীর নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ ছিলেন। তিনি চলে গেছেন, সবাই শোকাহত। কিন্তু তার চলে যাওয়ায় হেফাজতের ওপর কোনো প্রভাব পড়বে না। ওয়ামায়ে কেরামগণ ঐক্যবদ্ধ থাকবেন। হেফাজতে ইসলাম যে গতিতে ছিল, সেই গতিতেই সামনের দিকে এগিয়ে যাবে।

নেতৃবৃন্দ বলেন, আল্লামা শফীর নেতৃত্বে ওলামায়ে কেরামরা যেভাবে ঐক্যবদ্ধ ছিলেন, সেভাবেই আছেন। হেফাজত কোনো রাজনৈতিক সংগঠন নয়, এটা ইস্যুভিত্তিক অরাজনৈতিক সংগঠন। দেশে যখন কোনো অনৈসলামীক, দেশবিরোধী শক্তি ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করবে, তখন আবার শাপলা চত্বরে যেভাবে আহমদ শফীর নেতৃত্বে জাগরণ সৃষ্টি হয়েছিল, ভবিষ্যতেও সেই একই রূপে হেফাজতে ইসলামকে দেখতে পাবেন।

জানা গেছে, আল্লামা শাহ আহমদ শফী অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানের প্রধান ছিলেন। এর মধ্যে হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালকের পদ থেকে গত ১৭ সেপ্টেম্বর তিনি নিজেই সরে দাঁড়ান। এর একদিন পরই তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর পরের দিন মাদ্রাসা শুরার বৈঠকে তিনজনকে যৌথভাবে মাদ্রাসা পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়। মুফতি আব্দুস সালাম, মাওলানা শেখ আহমদ ও মাওলানা ইয়াহইয়া এই দায়িত্ব পান। নতুন করে নিযুক্ত তিনজনের মধ্যে শেখ আহমদ ছাড়া বাকি দুজন জুনায়েদ বাবু নগরীর অনুসারী। ফলে হাটহাজারী মাদ্রাসায় বাবু নগরীর কর্তৃত্ব অনেকটা প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেল।

এদিকে আল্লামা শফীর মৃত্যুর পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি সামনে এসেছে সেটি হলো, আলোচিত সংগঠন হেফাজতে ইসলামের আমিরের পদটি কে পাচ্ছেন। এ নিয়ে চলছে নানা গুঞ্জন। যদিও দলীয় নেতারা বলছেন, যেই আসুক ওলামারা ঐক্যবদ্ধ থাকবেন। তারপরও আল্লামা শফীর মতো সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি পাওয়া কঠিন হবে বলে ধারণা করছেন অনেকে। পদটিতে স্থান পেতে পারেন এমন আলোচনায় বেশ কয়েক জনের নাম পাওয়া গেছে। এরা হলেন, ঢাকা মহানগর হেফাজতের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির নূর হোসাইন কাসেমী ও ঢাকা মহানগর কমিটির প্রধান উপদেষ্টা ও কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির মুফতি ওয়াক্কাস। এছাড়া বর্তমান মহাসচিব জুনায়েদ বাবু নগরীর নামও আছে, যিনি ইতোমধ্যে হাটহাজারী মাদ্রাসায় আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়ে আল্লামা শফীর ছোট ছেলে আনাস মাদানীকে মাদ্রাসা থেকে সরাতে সক্ষম হয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি আনাস মাদানীর পদ নাযেমে তালিমাত বা শিক্ষা সচিব এবং প্রধান শায়খুল হাদিস হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন।

 

এ প্রসঙ্গে হেফাজতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, হেফাজতে ইসলাম একটি বৃহত্তর অরাজনৈতিক সংগঠন। এটার সুনির্দিষ্ট সাংগঠনিক কাঠামো আছে। শুরা কমিটি বসে পরামর্শ করে কাউন্সিলের মাধ্যমে আমির নির্বাচন করা হবে।

নেতৃত্বে আসার মতো সম্ভাব্য কে কে আছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, সম্ভাব্য অনেকেই আছেন। তাদের মধ্যে যারা যোগ্য বিজ্ঞ ক্লিন ইমেজের আছেন, দেশবাসী মেনে নেবে এমন লোক বাছাই করা হবে। শিগগিরই শুরার বৈঠক বসবে এবং সিদ্ধান্ত আসবে।

একটি সূত্র জানায়, হেফাজতে ইসলামের আমির ও মহাসচিব পদে নিয়োগ নিয়ে ইতোমধ্যে সিনিয়র নেতারা নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনা শুরু করেছেন। রোববার (২০ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায়ও একটি অনুষ্ঠানে হেফাজতের ঢাকা মহানগর কমিটি সভাপতি মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমী, কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব, ঢাকা মহানগর কমিটির যুগ্ম-সম্পাদক মাওলানা মামুনূল হক, মাওলানা মাহফুজুল হকসহ কয়েকজন সিনিয়র নেতা নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা বলেছেন। তারা আলোচনা করেছেন, আমির যদি সিনিয়র কেউ হন সেক্ষেত্রে মহাসচিব হবেন তরুণদের মধ্যে থেকে একজন। যারা দৌড়াতে পারবেন, কাজ করতে পারবেন।

একটি সূত্র জানায়, চট্টগ্রামে আল্লামা শফীর জানাজার পরে ঘরোয়াভাবে নিজেদের মধ্যে যে আলোচনা হয়েছে, সেখানেও এ ধরনের বক্তব্য এসেছে।

জানা যায়, হেফাজতের বর্তমান সিনিয়র নায়েবে আমির আল্লামা মুহিবুল্লাহ বাবু নগরী, যিনি বর্তমান মহাসচিব জুনায়েদ বাবু নগরীর মামা। তিনি গত দুবছর আগে জাতীয় গণমাধ্যমে ঘোষণা দিয়ে হেফাজতে ইসলামীর পদ থেকে সরে দাঁড়ান। ফলে বর্তমানে তাকে আমির বানানোর ব্যাপারে যে আলোচনা আছে সেটা হওয়ার সম্ভাবনা কম।

এরপরে কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির পদে আছেন চট্টগ্রাম মহানগর হেফাজতের আমির মাওলানা তাজুল ইসলাম। এর পরে আছেন কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ও ঢাকা মহানগর কমিটির সভাপতি মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমী। এরপর আছেন মুফতি ওয়াক্কাস। তিনি কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির এবং ঢাকা মহানগর কমিটির প্রধান উপদেষ্টা। এদের মধ্যে থেকেও একজন আসতে পারেন।

অন্য একটি সূত্র জানায়, হেফাজতের একটি অংশ চাচ্ছে জুনায়েদ বাবু নগরীকে মহাসচিব পদ থেকে আমিরের পদ দিতে। একই সঙ্গে মরহুম শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হকের ছেলে মাওলানা মামুনুল হককে মহাসচিব বানাতে। যিনি বর্তমানে ঢাকা মহানগর হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম-সম্পাদক পদে আছেন। সারাদেশের যুবকদের মধ্যে এই মাওলানা মামুনুল হকের একটা জনপ্রিয়তা আছে বলেও সূত্রটি জানায়।

 

Facebook Comments Box
You might also like