সাজেক পর্যটক শুন্য, সহিংসতায় পাহাড়ে পর্যটন খাতে ১শ কোটি টাকার ক্ষতি
বিশেষ প্রতিনিধি :
খাগড়াছড়িতে এক পাহাড়ি তরুণী ধর্ষণের অভিযোগকে কেন্দ্র করে উপজাতীয় একটি গোষ্ঠির সহিংস তান্ডবে পার্বত্য চট্টগ্রাম জুরে এখনো থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। তিন জেলায় ছড়িয়েছে আতঙ্ক। এসব ঘটনা দ্রুত দেশ বিদেশে ছড়িয়ে পড়লে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে এ অঞ্চলের পর্যটন খাত, ব্যবসা বাণিজ্য ও স্বাভাবিক জীবন যাত্রায়। এতে রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় পর্যটন খাত। এ খাতে প্রায় ১শ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে জানায় সংশ্লিষ্টরা। পর্যটন খাতের বিপর্যয় নিয়ে ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তরা চরম হতাশায় ভুগছেন।
সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও স্থানীয় প্রশাসন জানায় এক উপজাতীয় নারীকে ধর্ষনের অভিযোগ এনে আন্দোলনে নামে জুম্ম ছাত্র জনতার ব্যানারে পাহাড়িদের একটি অংশ। তারা শনিবার খাগড়াছড়িতে অবরোধের ডাক দিয়ে ক্রমশ সহিংস হয়ে উঠলে পুরো পার্বত্য চট্টগ্রামে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থতি নিয়ন্ত্রণে প্রশাসন খাগড়াছড়ি শহরে ১৪৪ ধারা জারি করে। পরেরদিন রবিবার তান্ডবকারীরা ১৪৪ ভেঙে আবারো সহিংসতা চালায়। দুদিনের তান্ডবে রাঙামাটি জেলাধীন সাজেক পর্যটন স্পটে আটকা পড়ে বহু পর্যটক। রবিবার সাজেকে আটকা পড়া পর্যটকদের সেনা বাহিনী নিরাপদে সরিয়ে নিয়ে আসে। সহিংস ঘটনার জেরে ওইদিন থেকে পর্যটক শুন্য হয়ে পড়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামের সবচেয়ে আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট মেঘের রাজ্য হিসেবে পরিচিত সাজেক। সাজেক রিসোর্ট মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক রাহুল চাকমা জন জানান, চলতি বছর আগুনে পুড়ে যাবার পর সাজেক ভ্যালিতে বর্তমানে চালু রয়েছে ১শটির বেশি রিসোর্ট, ৭/৮ টি রেস্টুরেন্ট। এ ছাড়াও স্থানীয় পণ্য বিক্রেতা, হস্তশিল্প, বস্ত্র বিতান, গাড়ি চালক সহ পর্যটন সংশ্লিষ্ট সকলে পর্যটক না থাকায় বেকার হয়ে পড়েছেন।
এদিকে সহিংস ঘটনার পর খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি জেলায়ও ধ্বস নেমেছে পর্যটন ব্যবসায়। এতে পর্যটন রিসোর্ট, আবাসিক হোটেল, রেস্তোরাঁ, উপজাতীয় বস্ত্র বিতান, টুরিস্ট বোট, কাপ্তাই হ্রদের হাউজ বোট সহ পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায় ১শ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হবে বলে দাবি করেছেন ব্যবসায়ীরা। আন্দোলনের নামে প্রথম দুই দিন খাগড়াছড়িতে তান্ডব চালালে খাগড়াছড়ি জেলা পর্যটক শুন্য হয়ে পড়ে। গতকাল সোমবার জুম্ম ছাত্র জনতার ব্যানারে তিন পার্বত্য জেলায় সড়ক অবরোধের ডাক দিলে রাঙামাটি জেলায়ও পর্যটকের ভাটা পড়ে। অবরোধে বন্ধ ছিলো দূর পাল্লার বাস ও পন্য পরিবহন। সড়ক অবরোধ ও সন্ত্রাসী তান্ডবের খবর প্রচারিত হওয়ার পর জেলায় আবাসিক হোটেল মোটেলের ১০ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত বুকিং বাতিল হয়ে যায়। এতে গড়ে প্রতিদিন রাঙামাটি জেলায় আবাসিক হোটেল খাতে ৩৫ থেকে ৪০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ক্ষতি হচ্ছে। রাঙামাটি পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্সের ব্যবস্থপক অলক বিকাশ চাকমা জানান, গতকাল সোমবার পর্যটন কর্পোরেশনের পর্যটন মোটেলের ১০ শতাংশ বুকিং বাতিল হয়েছে। এর ফলে টুরিস্ট বোট চালক, সিএনজি অটোরিকশা চালকসহ পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়েছেন বলে জানান তিনি। এছাড়াও জেলায় বেসরকারীভাবে গড়ে উঠা আবাসিক হোটেল, রিসোর্ট, কাপ্তাই হ্রদ ঘিরে তৈরী করা হাউজ বোটগুলোর ২০ শতাংশ বুকিং বাতিল হয়েছে বলে জানা গেছে। রাঙামাটি আবাসিক হোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ চৌধুরী জানান, “আমাদের জেলা শহরে সমিতির তালিকাভুক্ত ৫৪টি সহ ৬০টির মতো আবাসিক হোটেল রয়েছে৷ দূর্গাপুজার ছুটিকে কেন্দ্র করে সকলে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে ব্যবসা শুরু করে। কিন্তু সাম্প্রতিক পাহাড়ের অস্থিরতার খবর প্রচারিত হওয়ায় গতকাল সোমবার থেকে হোটেলের বুকিং বাতিল হতে থাকে। ফলে ব্যবসায়ীরা শুরুতেই অপূরণীয় ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে খাগড়াছড়ি সহিং ঘটনার রেশ ধরে রাঙামাটিতে জনমনে এক ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে। রাস্তাঘাটে জনসাধারণের চকাচলও সীমিত। দূর পাল্লার বাস চকাচল না করায় পর্যটক এসেছে কম। জেলা শহরের পর্যটন স্পটগুলোতে কোন ভীড় নেই। ব্যবসায়ীরা জানান এভাবে চলতে থাকলে পাহাড়ের পর্যটন খাত মুখ থুবড়ে পড়বে এতে ভেঙে পড়বে পার্বত্য চট্টগ্রামের অর্থনীতি।
এদিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রশাসন সর্বোচ্চ সজাগ রয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ।